ভালবাসার লালগোলাপ-২
অপরূপ সুন্দরী একটা মেয়ে। নাম- তনুজা। লোকালবাসে তার গা ঘেষে বসে অপরিচিত একটি ছেলে। নাম- তনু। তনুর গা ঘেষে বসা তনুজার মোটেও পছন্দ হয়নি। তনুজা তখন কিছু না বলে কুঁচকানো কপালে ঘাড় মুড়িয়ে বড়বড় চোখে ছেলে তনুর দিকে তাকাল। তনু তনুজার এমন তাকানো দেখে বুঝতে পারল এবং দেরি না করে মিথ্যে গল্প সাজিয়ে বলল, সরি! আসলে মনটা আমার তেমন ভাল নেই। বোন হাসপাতাল, সিজার হয়েছে সে। তার রক্ত লাগবে ফোন করেছে। যথা সময়ে রক্ত না দিতে পারলে তার জীবন বাঁচানো দায় হবে। যে তনুজা একটু আগে একটি ছেলে তনুর মত গা ঘেসে বসার দরুণ ছেলেটিকে যথেচ্ছা বলেছে সে কপাল কুঁচকানো তনুজা তনুর এমন কথা শুনে তার গা ঘেষে বসার দরুন যে কথাটি বলবে ভাবছিল নিমেষেই তা পানি হয়ে যায়। তনুজা তনুকে কিছুতো বলবে দূরের কথা বরং সে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ছেলেকটিকে বলল, বসেন সমস্যা নেই। অতপর, সে তনুকে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, আপনার আপুর ব্লাড গ্রুপ কি? সে কোন হসপিটালে আছেন? তনু তখন বলল, সদর হসপিটাল তার ব্লাড গ্রুপ এ পজিটিভ। তনুজা তখন বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে বলেন এ পজিটিভ? ছেলেটি হ্যাঁ! এখন রক্ত সংগ্রহ হয়েছে? তনু বলল, আমি এ পজেটিভ। তবে, তার অনেক রক্ত লাগবে। আপনি? তনুজা বলল আমিও এ পজেটিভ। এই কথা বলে তনুজা তনুর হাত থেকে সেল ফোনটি নিয়ে তার সেলফোন নাম্বারটি তনুর সেল ফোনে তুলে বলল, আমি আমার গন্তব্যে এসে গেছি, চেয়ারম্যান বাড়ি আমাদের বাড়ি। নাম্বারটা রাখেন রক্ত লাগলে আমাকে ফোন দিয়েন। একটা অপরিচিত মেয়ের এমন উদারতায় ছেলেটি বিস্মিত হলেন। ছেলেটি তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। অপরিচিত সুন্দরী মেয়ে তার বোনের বিপদের কথা শুনে নাম্বার দিয়ে এমন উদারতা দেখালেন!
ছেলেটি যেমন মেয়েটিকে নিয়ে ভাবছেন, ঠিক, মেয়েটিও টল ফিগার প্রিন্সেস ভাবের ছেলেটিকে নিয়ে ভাবছেন। ভাবছেন, যাত্রাবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া ঠকর ঠকর লং জার্নির লোকালবাসে ছেলেটির গা ঘেষে বসার কথা। তার এ ভাবনা তাকে দিন দিন পাগল করে তুলছে। মনে মনে বলছেন, কেন যে আমি তার নাম্বারটা নিলাম না! আমি তাকে নাম্বার দিয়েছি সেতো ফোন করলোনা। মনে হয় রক্ত সংগ্রহ হয়ে গেছে! যদি রক্ত সংগ্রহ হয়ে যায় তাহলেতো সে আমাকে আর ফোন দিবেনা। তো আমার কি হবে? আমিতো তার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
এদিকে ছেলে মেয়েটিকে নিয়ে ভাবছে, কি করা যায়! আপুর গল্প এতো মিথ্যে গল্প। হঠাৎ ছেলের মাথায় বুদ্ধি আসলো। মিথ্যেতো মিথ্যে প্রেমে যখন পড়েছি তাকে পেতেতো কিছু মিথ্যে অভিনয় করতে হবে। সে এবার মেয়েটিকে ফোন দিয়ে বলল, তনুজা আমি তনু। সেই দিন গাড়িতে যে নাম্বার দিলে। তনুজাতো তার কল পেয়ে মহ খুশি কিন্তু ছেলেকে তা বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বলল, তো বল। তনু- আমার বোনের রক্ততো ম্যানেজ হচ্ছেনা। ডাক্তার বলছে, তাকে বাঁচাতে প্রতিদিন দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। দয়া করে তুমি যদি একটু আসতে। উতলা মেয়েটি দ্বিতীয় কোন আপত্তি না করে বলল, তোমার বোন, আমার বোন। আমি এক্ষুনি আসছি। ছেলেটি ওকে। অপেক্ষায় থাকলাম।
মেয়েটি আসছে জেনে ছেলে দ্রুত একটা লাল গোলাপ কিনে নিল। লাল গোলাপ কিনে হাসপাতালের ম্যানেজারের সহিত কথা বলে দু’ঘন্টার জন্য হাসপাতালের একটি ক্যাবিন ভাড়া করে এবং সেখানে লাল গোলাপটি লুকিয়ে রাখে।
কিছুক্ষণপর মেয়েটি আসে এবং মেয়েটিকে রিসিভ করে ছেলে মেয়েটিকে ক্যবিনে নিয়ে যায়। ক্যাবিনে ঢুকে মেয়েটি সেখানে ছেলে তনু আর একটা বয় ব্যতীত কাউকে দেখতে পেলনা। দেখতে না পেয়ে তনুজা তনুকে বলল, আপু কই? তখন তনু বলল আছে তুমি বস। এরপর তনু বয়কে ডেকে নাস্তা আনলেন এবং তনুজাকে বলল নাস্তা নাও। তনুজা নাস্তা না নিয়ে বলল আমিতো নাস্তা খেতে আসিনি। রক্ত দিতে এসেছি। আগে যে উদ্দেশ্যে এসেছি সেটা করি। নাস্তা না হয় পরে খাব। তনু বলল, আরে সমস্যা নেই নাস্তা নাও। এরপর রক্ত দিতে পারবে। তাছাড়া, রক্ত একটু আগে আমি দিয়েছি। তোমারটা পরে দিলেও চলবে। তনুর কথা শুনে অবশেষে তনুজা নাস্তা নিল। নাস্তা খাওয়া শেষ তনু লাল গোলাপটি হাতে নিয়ে তনুজাকে বলল, সরি, আমি আমার আপুর যে অসুস্থতার কথা বলেছি সব অসত্য। গাড়ীতে তোমাকে দেখে আমার ভাল লেগেছিল। তাই তোমাকে পেতে আমি এই মিথ্যে অভিনয় করেছি। এই বলে ছেলটি – ‘আই লাভ ইউ’ বলে লাল গোলাপটি তার হাতে দেয়। তনুজা তনুকে তুমি এটা ঠিক করোনি, একটু আমতা আমতা করে ফুলটি নেন এবং ফুলটি নিয়ে তনুকে ধন্যবাদ দেন। এরপর তনুজা মুসকি হেসে ছেলেটির ন্যায় -‘আই লাভ ইউ টু’ বলে তার পক্ষ থেকে ফুলটি ছেলে তনুর দিকে এগিয়ে দেয়। তনুজার কোমল হাতে লাল গোলাপ পেয়ে তনু খুশিতে আত্মহারা। সে তনুজার এমন উদার ভালবাসা পেয়ে তাকে জড়িয়ে তার কপালে একটা চুমো খেলো,, তারপর,, তারপর,,, তারপর তনুজা তনুর হাতটি ধরে প্লিজ আজ এপর্যন্ত। বাকী বিয়ের পর। এখন চলো পার্কে যায়। তনু তনুজা দু’জন দু’জনের হাত ধরে পার্কে যায়। সেখানে তারা বিকেলের নির্মল সমীরণ আর স্বর্ণালি সন্ধ্যা উপভোগ করেন। উপভোগ শেষে দু’জনে একটি প্লেটে একটি ফুচকা খেয়ে আজকের মত আপন আপন নীড়ে ফিরে যায়।